মাশরাফি ক্ষমাপ্রার্থী, কেন শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াননি জানালেন নিজেই

পেশাদার ক্রিকেট থেকে অবসরের আগেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নড়াইল-২ আসন থেকে ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন মাশরাফি বিন মুর্তজা। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় দলের সাবেক এই সফল অধিনায়ক।
শুধু তাই নয়, তরুণ একজন রাজনীতিবিদ হয়েও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাকে সংসদের হুইপ নির্বাচিত করে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে ব্যক্তিগত সমর্থন থাকলেও দলের দায়বদ্ধতার কারণে মুখ খুলে কিছু বলতে পারেননি তরুণদের এই আইকন।
ছাত্রদের আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নড়াইলে মাশরাফির বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলা করে। সেই হামলায় তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সব স্মৃতি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিয়ে কোনো মন্তব্য না করায় সমালোচনা শুনতে হয়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের কড়া সমালোচনা এখনো চলছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর তাই নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্যের বাড়ি পুড়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
এত কিছু হওয়ার পরেও অবশ্য এত দিন মুখ খোলেননি মাশরাফি। তবে এবার আর চুপ থাকতে পারলেন না তিনি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিয়ে এবার কথা বলেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। দেশের ক্রান্তিকালে মানুষের পাশে থাকতে না পারায় দায় মাথা পেতে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক।
একটি অনলাইন পোর্টালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাশরাফি বলেছেন, ‘এই কষ্ট থাকবেই। হয়তো আজীবন থাকবে। দেশের একটা ক্রাইসিস মুহূর্তে পাশে থাকতে পারিনি, কিছু করতে পারিনি, এটা আমাকে সব সময়ই ভোগাবে, পোড়াবে। সব সময়ই থেকে যাবে। সব সময় সব কথা বলা যায় না। কিছু জিনিস হয়তো বলার ব্যাপারও নয়। এত দিন চুপ ছিলাম। আজকে কিছু বলছি। কিছু হয়তো সামনে বলব। জীবনে অনেক কিছু হবে। তবে এই কষ্টটা রয়ে যাবে। যত কিছুই হোক, এটা কখনো যাবে না। নিজের ওপর সেই হতাশা সব সময়ই থাকবে।’
ক্রিকেটার হিসেবে মাশরাফির কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল তা পূরণ করতে না পারার দায় নিজের মাথায় নিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘বিশেষ করে, মানুষের যে আবেগ-ভালোবাসার জায়গা ছিল, ক্রিকেটার মাশরাফির প্রতি যে দাবি ছিল, সেটা পূরণ করতে পারিনি এবং সেই দায় মাথা পেতেই নিচ্ছি। আমি ব্যর্থ হয়েছি এবং সেটা আমাকে সেই শুরু থেকেই পোড়াচ্ছে। রাজনীতিবিদ হিসেবে, আমি কিছু করার চেষ্টা করেছি। পারিনি।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যৌক্তিক ছিল বলেও স্বীকার করেছন মাশরাফি। সাবেক পেসার বলেছেন, ‘কোটা সংস্কারের আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক ছিল। আমার নিজের কাছেও মনে হচ্ছিল, এটা হয়ে যাবে। তবে সবাই যখন চাচ্ছিল যে আমি কিছু একটা বলি বা স্ট্যাটাস দিই (ফেসবুকে)…ততক্ষণে আসলে সব কিছু এত দ্রুত হচ্ছিল…ভাবছিলাম যে আমি যদি কিছু লিখি বা মন্তব্য করি, সেটার সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে…অনেক কিছু ভাবছিলাম আর কী…সব মিলিয়ে কিছু লেখা হয়নি।’
বাড়িতে আগুন লাগানোয় কষ্ট পেলেও কারো প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই বলে জানিয়েছেন মাশরাফি। সঙ্গে এমনটিও জানিয়েছেন তার প্রতি কারো ক্ষোভ থাকলে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী। তিনি বলেছেন, ‘নড়াইলের বাড়িটা করেছিলাম মায়ের জন্য। এখন শেষ। অনেকেই বলেছেন মামলা করতে, ব্যবস্থা নিতে। ছবি-ভিডিও সবই আছে অনেকের কাছে। তবে আমি বলেছি, এসব করব না। আমার বাবাকেও বলে দিয়েছি। এখনকার সরকার বা ভবিষ্যতে নির্বাচন করেও যে সরকার আসুক, কারো কাছেই বিচাই চাইব না। কোনো অভিযোগ নেই। খুলনা-যশোর থেকে বা ঢাকা থেকে গিয়ে কেউ এই বাড়ি ভাঙেনি। নড়াইলের কোনো না কোনো জায়গা থেকে উঠে আসা মানুষই পুড়িয়েছে। নড়াইলের মানুষের বিরুদ্ধে বিচার আমি চাইব না। নিজের ভাগ্য মেনে নিয়েছি। হয়তো কোনো ভুল করেছি, সেটার ফল পেয়েছি। কষ্ট আছে অবশ্যই, তবে রাগ-ক্ষোভ নেই কারো প্রতি। আমার প্রতি এখনো কারো ক্ষোভ থাকলে, আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’
সম্পর্কিত সংবাদ

নতুন অধিনায়ক পেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, পাকিস্তান সিরিজের দল ঘোষণা
চলতি মাসের শেষ দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সফরে সাত ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবেবিস্তারিত…

ড্রাগ নিয়ে নিষিদ্ধ রাবাদা
আচমকাই আইপিএল ছেড়ে নিজ দেশে ফিরে গিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা। আইপিএল দল গুজরাটবিস্তারিত…