অবসর ও কল্যাণ সুবিধা ফান্ডে ঘাটতি ১১ হাজার কোটি টাকা

অর্থ সংকটের কারণে দীর্ঘ সময়েও অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পাচ্ছেন না বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। অর্থ সংকট ও জুলাই আন্দোলনের পর নানা জটিলতায় এই অর্থ প্রাপ্তির অপেক্ষা বেড়েছে কয়েক গুণ। অবসর ও কল্যাণ–সুবিধা মিলিয়ে ৮৫ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন অনিষ্পন্ন হয়ে জমা পড়ে আছে। এসব আবেদনের বিপরীতে টাকা দেওয়ার জন্য বোর্ডে ঘাটতি রয়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা।

অবসরের পরপরই অবসর ও কল্যাণ–সুবিধা পাওয়ার প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবতা হলো শিক্ষক-কর্মচারীদের এসব সুবিধা পেতে এখন তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। বর্তমানে অবসর সুবিধার টাকা পাচ্ছেন ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের আবেদনকারীরা। আর কল্যাণ সুবিধার টাকা পাচ্ছেন ২০২২ সালের মে মাসের আবেদনকারীরা। সেদিকে থেকে অবসর সুবিধার চেয়ে একটু আগে টাকা পাচ্ছেন কল্যাণ সুবিধার আবেদনকারীরা।

অবসর ও কল্যাণ–সুবিধা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিনের জট লেগে আছে বোর্ডে। এছাড়া বিভিন্ন সময় পে স্কেল বেড়েছে, তাতে এই সুবিধার টাকার অংক আরও বেশি হয়েছে। কিন্তু বোর্ডে সে অনুযায়ী টাকা জমা হয়নি। ফলে আমরা টাকা দিতে পারছি না।

সারাদেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী আছেন পাঁচ লাখের বেশি। এসব শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর ও কল্যাণ–সুবিধা দেওয়া হয় দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এর মধ্যে কল্যাণ–সুবিধার টাকা দেওয়া হয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে। আর অবসর–সুবিধার টাকা দেওয়া হয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর–সুবিধা বোর্ডের মাধ্যমে।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুসারে, অবসরের জন্য প্রায় ৪৫ হাজার এবং কল্যাণ–সুবিধার জন্য প্রায় ৪০ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন হয়ে জমা পড়ে আছে।

আরও জানা যায়, অবসর–সুবিধার জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের ৬ শতাংশ হারে টাকা কাটা হয়। আর কল্যাণ–সুবিধার জন্য ৪ শতাংশ হারে টাকা কেটে রাখা হয়। এছাড়া সরকার মাঝেমধ্যে থোক বরাদ্দ দেয়। এফডিআরের লভ্যাংশ এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে কেটে রাখা টাকা দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ–সুবিধার টাকা দেওয়া হয়।

অবসর–সুবিধা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৬ শতাংশ হারে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে মাসে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা আদায় হয়। এফডিআর থেকে মাসে আয় হয় পাঁচ কোটি টাকা। এই খাতে মাসে আয় হয় ৮০ কোটি টাকা, যা বছরে ৯৬০ কোটি টাকা। কিন্তু শুধু অবসর–সুবিধার জন্য মাসে প্রয়োজন হয় ১২০ ও বছরে এক হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। এই হিসাবে বছরে ঘাটতি ৪৮০ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রায় ৪৫ হাজার শিক্ষকের আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এসব আবেদন এখন নিষ্পত্তি করতে হলে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এরপর স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ দিলে কাউকে আর অবসর–সুবিধার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।

কল্যাণ বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ৪ শতাংশ চাঁদার অর্থে পরিচালিত সরকারের আর্থিক এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার আবেদন অনিষ্পত্তি অবস্থায় রয়েছে। যার জন্য এককালীন তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা দরকার। এরপর প্রতি বছর সরকার ২০০ কোটি টাকা দিলে তা স্থায়ী সমাধান সম্ভব।

শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা তহবিলের ঘাটতি মেটাতে মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা ফি আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২১ সালের পর থেকে টাকা আদায় করা হলেও সেটি এখনো অবসর বোর্ডে আসেনি বলে জানান বর্তমান সচিব। তবে এই টাকা দিয়ে খুব বেশি সমস্যার সমাধান করা যাবে না বলেও জানান তিনি।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) শরিফা নাছরীন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের সব টাকা ছিল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকে। ব্যাংকটিতে একটু সমস্যা থাকায় টাকা দিতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে আমরা সব টাকা সোনালী ব্যাংকে ট্রান্সফারের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আশা করি দ্রুতই আবার শিক্ষকরা টাকা পাবেন। এছাড়া অসুস্থতা ও হজে যাবার জন্য বিশেষ ক্যাটাগরি করেও আমরা টাকা দিচ্ছি। কিন্তু সময় মতো টাকা না দেওয়ার বড় সমস্যা হলো ফান্ড ঘাটতি।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী অবসর বোর্ডের বর্তমান সচিব (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক জাফর আহমদ ঢাকা মেইলকে বলেন, আসলে ফান্ড না থাকার কারণে টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিশাল একটা ঘাটতির মধ্যে রয়েছে বোর্ড। তাই টাকা থাকাসাপেক্ষে আমরা আবেদনের ক্রমিক নম্বর অনুসারে টাকা প্রদান করছি। আর শিক্ষার্থীদের থেকে যে টাকা নেওয়া হয়েছে সেটা এখনো বোর্ডে এসে জমা হয়নি।

নিউজটি ফেসবুকে শেয়ার করুন ...
fb-share-icon





সম্পর্কিত সংবাদ

  • ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৪ মে
  • ৪৪-৪৭তম বিসিএসের ফলাফল ও পরীক্ষার তারিখ প্রকাশ
  • ঢাবি ক্যাম্পাসজুড়ে উড়ছে ফিলিস্তিনের পতাকা
  • এসএসসির ফল প্রকাশ কতদিনে, জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা
  • ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার তারিখ জানালো পিএসসি
  • ঢাবি থেকে ছাত্রলীগের সাদ্দাম ও ইনান বহিষ্কার
  • Copy link
    URL has been copied successfully!