নিজামীর ফাঁসির রাতেই আ.লীগের ‘মরণযাত্রা’!

ঠিক নয় বছর আগে, ২০১৬ সালের ১০ মে রাতে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল। একই তারিখে, ২০২৫ সালের ১০ মে রাতেই একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিলো দেশের অন্তর্বর্তী সরকার—বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে দেখছেন ‘আওয়ামী লীগের মরণযাত্রা’ হিসেবে।

শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের একটি সংশোধনীও অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধিত আইনে ট্রাইব্যুনাল এখন থেকে কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সংশ্লিষ্ট সমর্থকদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে পারবে।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিরুদ্ধে বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির সব ধরনের কার্যক্রম—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ—সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ থাকবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিচার প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন রাখা এবং জুলাই আন্দোলনের কর্মীদের রক্ষা করার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জানানো হয়।

উল্লেখ্য, এই সিদ্ধান্ত এমন সময় এলো যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বাতিল চেয়ে করা আপিলের রায় ঘোষণার দিন (২৭ মে) ঠিক করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, রায়টি আসামিপক্ষের পক্ষে গেলে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ঘিরে গঠিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।

তবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর, দেশের রাজপথে এক ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। শাহবাগ থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত এলাকাজুড়ে ছাত্র-জনতা এবং জামায়াতপন্থি সমর্থকদের উল্লাসে উত্তাল হয়ে ওঠে পরিবেশ। অনেকেই সেজদায় লুটিয়ে পড়েন, কেউবা আনন্দে কেঁদে ফেলেন।

আন্দোলনকারীদের একজন বলেন, ‘নিজামীর ফাঁসির দিনেই যারা তাকে হত্যা করেছে, আজ সেই তারাই ইতিহাসের আদালতে হার মানলো। আল্লাহর পক্ষ থেকে এর চেয়ে ভালো বিচার আর হতে পারে না।’ আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘এই দলটি প্রশাসনকে দলীয়করণ করে মানুষ খুন করেছে, এখন তারা নিজেরাই বিচারের মুখোমুখি।’

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্তে বিএনপির আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও, জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় ভূমিকা ব্যাপকভাবে লক্ষ করা গেছে। জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবির মাঠ পর্যায়ে আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।

এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসানাত আব্দুল্লাহর ডাকে। এরপরই হেফাজতে ইসলাম, ইনকিলাব মঞ্চ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টি, লেবার পার্টি, খেলাফত মজলিস, ইসলামি ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জুলাই মঞ্চসহ বহু রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন একে একে সংহতি জানিয়ে মাঠে নামে।

পরবর্তী কর্মদিবসে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানানো হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে। পাশাপাশি ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।

নিউজটি ফেসবুকে শেয়ার করুন ...
fb-share-icon





সম্পর্কিত সংবাদ

  • কুরআন-সুন্নাহবিরোধী নীতি বাস্তবায়ন না করার আহ্বান হেফাজত নেতাদের
  • স্থানীয় নির্বাচন আগে হলে স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে: তারেক রহমান
  • দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করার দাবি মির্জা ফখরুলের
  • ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিচারে একমত ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি
  • জামায়াত আমিরের সাথে ইইউ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
  • সবাইকে নিয়ে ফুলের বাগান গড়তে চান জামায়াতের আমির
  • নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পিআর সিস্টেমের পক্ষে জামায়াত: ডা. শফিকুর রহমান
  • Copy link
    URL has been copied successfully!