মুমিনের জন্য আল্লাহর নিরাপত্তা বিধান

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একদিন আমি নবী কারিম (সা.)-এর পেছনে বসা ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, ‘হে বত্স! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে কয়েকটি বাক্য শেখাব। আল্লাহর বিধানগুলো যথাযথভাবে মেনে চলবে, আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করবেন। আল্লাহর দাবিগুলো (হুকুমকে) অদায় কোরো, তবে তুমি আল্লাহকে তোমার সামনেই পাবে। আর যখন তুমি কারো কাছে কিছু চাওয়ার ইচ্ছে করবে, তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। যখন সাহায্য চাইতে হয় তখন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে। জেনে রেখো! যদি সব সৃষ্টি একত্র হয়ে তোমার কোনো উপকার করতে চায় তবে তারা আল্লাহর নির্ধারিত পরিমাণ ছাড়া কখনই তোমার উপকার করতে পারবে না। আর যদি সব সৃষ্টি একত্র হয়ে তোমার কোনো ক্ষতি করতে চায়, তবে তারা আল্লাহর নির্ধারিত পরিমাণ ছাড়া কখনই তোমার ক্ষতি করতে পারবে না। কলম তুলে নেওয়া হয়েছে এবং দপ্তরগুলো শুকিয়ে গেছে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৬)
আল্লাহর নিরাপত্তা লাভের ব্যাখ্যা
জাগতিক জীবনে আল্লাহর নিরাপত্তা লাভের অর্থ হলো পার্থিব জীবনের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া এবং পরকালে আল্লাহর নিরাপত্তা লাভের অর্থ হলো জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া। অর্থাত্ আল্লাহর নিরাপত্তাপ্রাপ্ত ব্যক্তি দুনিয়া ও আখেরাতের সব ধরনের দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষা পাবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের দায়িত্ব তোমাদেরই ওপর। তোমরা যদি সত্পথে পরিচালিত হও, তবে যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তারা তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহর দিকেই তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তন, অতপর তিনি তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবগত করবেন।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ১০৫)
আল্লাহ যেভাবে মুমিনদের রক্ষা করেন
যারা আল্লাহর আদেশ মান্য করে চলে আল্লাহ তাদের সব ধরনের ক্ষতি ও বিপদ থেকে রক্ষা করেন। নিম্নে এমন কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো:
১. শারীরিক শক্তি অক্ষুণ্ন রাখা : আবু তৈয়ব তাবারি (রহ.) নামে একজন নেককার বান্দা ছিলেন। তাঁর বয়স একশ’ বছর অতিক্রম করেছিল তবুও তিনি তাঁর বুদ্ধিমত্তা, শক্তি ও পরিপূর্ণ ইন্দ্রিয় শক্তি উপভোগ করতেন। এমনকি দূর-দূরান্তে সফরও করতেন। লোকেরা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাবারি (রহ.) বললেন, ‘এগুলো সে অঙ্গ-প্রতঙ্গ যাকে ছোট বেলায় গুনাহ থেকে রক্ষা করেছি, ফলে আল্লাহ আমার বৃদ্ধ বয়সে সেগুলোকে দুর্বলতা থেকে রক্ষা করেছেন।’ (আল উকুক : ১/১৩)
২. পরিবার ও প্রতিবেশীর নিরাপত্তা : মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির (রহ.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নেককার ব্যক্তি, তার সন্তান ও তার সন্তানের সন্তান, সে যে গ্রামে বাস করে সে গ্রামবাসীকে ও তার চতুর্পাশের এলাকাবাসীকে রক্ষা করেন। তারা আল্লাহর নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে অবস্থান করে।’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ২০/৯)
৩. সম্পদ রক্ষা করা : শায়বান (রহ.) ছিলেন আল্লাহর এক নেক বান্দা। তিনি মরুভূমিতে তার ছাগল চরাতেন। জুমার দিনে তিনি তাদের জন্য একটি দাগ টেনে দিয়ে তার মধ্যে ছেড়ে আসতেন। তিনি জুমার নামাজের ইমামতি করতেন। নামাজ শেষে তিনি ছাগলের কাছে ফিরে এসে ছাগলগুলোকে পূর্বাস্থায় পেতেন। তারা সেখান থেকে একটুও নড়াচড়া বা ছুটাছুটি করত না।’ (ই’মাল মা শি’তা, কামা তাদিনু তুদানু : ১/৮)
৪. সৃষ্টিজগত অনুকূল হয়ে যায় : ইবরাহিম বিন আদহাম (রহ.) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বুজুর্গ। একবার তিনি বাগানে ঘুমিয়ে ছিলেন। একটি সাপ একটি বেজিকে ধাওয়া করে সে বাগানে নিয়ে এলো। কিন্তু সাপটি যখন ইবরাহিম বিন আদহাম (রহ.)-কে দংশন করতে অগ্রসর হলো তখন বেজিটি নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে সাপের সাথে লড়াই শুরু করল। ততক্ষণে ইবরাহিম বিন আদহাম (রহ.)-এর ঘুম ভেঙ্গে গেল। (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ২০/১১)
সম্পর্কিত সংবাদ

৩০ দিন জমজমের পানি ছাড়া কিছুই খাননি যে সাহাবি
পবিত্র জমজম মহান আল্লাহর এক মহা নিদর্শন। মক্কায় অবস্থিত এ কূপের পানি শুধু পিপাসাকাতর কলিজাকেইবিস্তারিত…

অসুস্থতা অভাব অসহায়ত্ব একসাথে হলে এই দোয়াটি পড়ুন
দোয়া মুমিনের হাতিয়ার। দোয়া কবুলের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেন। বান্দার যাবতীয় দুঃখ-কষ্টবিস্তারিত…