অনড় আন্দোলনকারীরা, আ.লীগ নিষিদ্ধের উপায় খুঁজছে সরকার

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর প্রায় নয় মাস পর আবারও প্রচণ্ড চাপে পড়েছে আওয়ামী লীগ। টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ক্ষমতা ধরে রাখা দলটি এবার নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। জুলাই গণহত্যার জন্য তাদের দায়ী করে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশ। রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন ছাত্র-জনতা। দেশের অন্যান্য স্থানেও কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
শাহবাগ অবরোধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমরা। তাদের নেতৃত্বাধীন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। এই অবস্থায় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ‘শাহবাগ ব্লকেড’ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হলে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নাহিদ ইসলাম; যে কর্মসূচিতে শেখ হাসিনার পতন হয়েছিল।
দাবি আদায়ে আন্দোলনকারীরা অনড় রয়েছেন। কোনোভাবেই তারা রাজপথ ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন। তাদের দাবি, বিএনপি ছাড়া প্রায় সব দলই তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। এবার তারা বিএনপির অপেক্ষায় রয়েছেন। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। দলের কেউ কেউ পূর্বের অবস্থান নতুন করে তুলে ধরছেন। বিএনপি মনে করে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কি না সেটার সিদ্ধান্ত জনগণ নেবে। জনগণ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।
বিএনপির নেতারা বিচ্ছিন্নভাবে এই বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শুক্রবার (৯ মে) লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া বক্তব্যে সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলেছেন। জুলাই আন্দোলনের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগও করেছেন। এছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার চাইলে আইন করে নিষিদ্ধ করতে পারে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কি না এটা তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার না।
এদিকে আন্দোলনকারীরা অনড় থাকায় অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যারা এই সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ সরকারের অংশও ছিলেন, তারাই সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। বিষয়টি সরকারকে এক ধরনের চাপেও ফেলেছে। সরকার যদিও এতদিন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে বিএনপির সুরে কথা বলছিল এবং অনেকটা স্পষ্ট করেও দিয়েছিল- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে কোনো আইন করবে না; এখন আন্দোলনের চাপে পড়ে সরকার তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনার ঘোষণা দিয়েছে।
সরকার প্রথমে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধের ইঙ্গিত দিয়েছিল। তবে আন্দোলনকারীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আওয়ামী লীগকেই নিষিদ্ধ করতে হবে। সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠন নিষিদ্ধ করলে হবে না। এজন্য আওয়ামী লীগকে কীভাবে নিষিদ্ধ করা যায় সে বিষয়ে ভাবছে সরকার।
চাপের মুখে পড়ে সরকার শুক্রবার (৯ মে) এ ব্যাপারে একটি বিবৃতি দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। শিগগির রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সবাইকে সে পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। এ ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ইতোমধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে, তাদের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সরকার বিবেচনায় রাখছে। সে পর্যন্ত সকলকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানাচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার জনদাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রচলিত আইনের অধীনে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এছাড়া, সরকারের পক্ষে থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করার জন্য অনেকে উপদেষ্টা পরিষদের কাউকে কাউকে দায়ী করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ব্যাপারে লেখালেখি হচ্ছে। এর মধ্যে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকেও দায়ী করছেন কেউ কেউ। তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন।
আসিফ নজরুল ফেসবুকে লিখেন- আমার বিরুদ্ধে কিছু মানুষ জঘন্য মিথ্যাচার ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে। আমি আপনাদের সুস্পষ্টভাবে জানাতে চাই, খুনের মামলার আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনে বাধা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশ ও গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর, যা কোনোভাবেই আমার আইন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত বিষয় নয়।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছেন নিম্ন আদালতের বিচারকরা। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, আদালতের বিচারকদের দায়িত্ব বিমানবন্দর পাহারা দেওয়া না বা কারো চলাচলে বাধা দেওয়া না।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণের সুযোগ রাখার লক্ষ্যে আইসিটি আইনে সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিধান আইন মন্ত্রণালয়ের খসড়ায় ছিল। আইন উপদেষ্টা হিসেবে আমি নিজে এটা উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উত্থাপন করেছি। আমার উত্থাপিত খসড়ার আমিই বিরোধিতা করব এটা কীভাবে সম্ভব? উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কোনো উপদেষ্টা কী ভূমিকা রেখেছেন এনিয়ে আমাকে, ছাত্র উপদেষ্টাদের বা অন্য কাউকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকুন। সেখানে যা সিদ্ধান্ত হয় তার দায় দায়িত্ব আমাদের প্রতিটি উপদেষ্টার।
আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রশ্নে কোনো দ্বিমত নেই। তবে পদ্ধতি নিয়ে সবার নিজস্ব মত থাকতেই পারে।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে, আইসিটি আইন চাইলেই আমরা কয়েক দিনের মধ্যে সংশোধন করতে পারবো। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য সন্ত্রাস দমন আইনসহ অন্য আইনগুলোও আছে। কাজেই আইন কোনো সমস্যা না। রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ চাইলে বা বিচারিক আদালত এ সম্পর্কে কোনো পর্যবেক্ষণ বা রায় আসলে অবশ্যই আইনানুগভাবে দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যাবে। আমরা সেই প্রত্যাশায় আছি। ইনশাল্লাহ্।
সম্পর্কিত সংবাদ

দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ গোছানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ : ড. ইউনূস
দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে ‘সেকেলে’ আখ্যা দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেছেন, ‘আমরাবিস্তারিত…

এপ্রিলে ৫৬৭ সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরেছে ৫৮৩ প্রাণ, আহত ১২০২
এক মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের সংখ্যা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তারাবিস্তারিত…