৩০ দিন জমজমের পানি ছাড়া কিছুই খাননি যে সাহাবি

পবিত্র জমজম মহান আল্লাহর এক মহা নিদর্শন। মক্কায় অবস্থিত এ কূপের পানি শুধু পিপাসাকাতর কলিজাকেই শীতল করে না, হৃদয় ও আত্মাকেও পরিতৃপ্ত করে। দেহ ও মনকে সজীব করে তোলে।
জমজম সম্পর্কে হাদিস
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, خَيْرُ مَاءٍ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ مَاءُ زَمْزَمَ، فِيهِ طَعَامٌ مِنَ الطّعْمِ وَشِفَاءٌ مِنَ السُّقْمِ ‘জমজমের পানি ভূপৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠ পানি। এতে রয়েছে খাদ্যের বৈশিষ্ট্য ও রোগ থেকে মুক্তি। (আলমুজামুল কাবির, তবারানি: ১১১৬৭; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৫৭১২) অর্থাৎ জমজমের পানি শুধু পিপাসা মেটায় না, ক্ষুধাও নিবারণ করে, রোগমুক্তির জন্যও কার্যকর।
৩০ দিন জমজমের পানি ছাড়া কিছুই খাননি যে সাহাবি
হজরত আবু জর গিফারি (রা.) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে নবীজির কথা সত্যতা যাচাই করার জন্য মক্কা এসে ৩০ দিন পর্যন্ত অবস্থান করেন। এ পুরোটা সময় তিনি শুধু জমজমের পানি পান করে কাটিয়েছেন।
(দীর্ঘ হাদিসের একাংশে) আবু জর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) এসে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন। এরপর তিনি ও তাঁর সাথি তাওয়াফ করে নামাজ আদায় করেন। নবীজি নামাজ শেষ করলে আমি তাকে সালাম দিই। নবীজি জিজ্ঞাসা করেন, কে তুমি? আমি বললাম, গিফার বংশের লোক আমি। নবীজি বললেন, কোথায় ছিলে? আমি বললাম, ত্রিশ দিন পর্যন্ত এখানেই ছিলাম। নবীজি জিজ্ঞেস করলেন, কে তোমাকে খাবার খাইয়েছে। উত্তরে আমি বললাম- مَا كَانَ لِي طَعَامٌ إِلّا مَاءُ زَمْزَمَ فَسَمِنْتُ حَتّى تَكَسَّرَتْ عُكَنُ بَطْنِي، وَمَا أَجِدُ عَلَى كَبِدِي سُخْفَةَ جُوعٍ ‘জমজম ছাড়া আমার আর কোনো খাবার ছিল না। শুধু এ পানি পান করেই দিন কাটিয়েছি।
এমনকি মোটা হয়ে গেছি। (এ দীর্ঘ সময়ে) আমি কখনো ক্ষুধা অনুভব করিনি। নবীজী তখন বলেন- إِنّهَا مُبَارَكَةٌ، إِنّهَا طَعَامُ طُعْمٍ ‘এটা বরকতময় পানি। এতে রয়েছে খাদ্যের বৈশিষ্ট্য। (সহিহ মুসলিম: ২৪৭৩)
এ তো কিতাবে উল্লেখিত একটি ঘটনা মাত্র। জানা নেই, যুগে যুগে কত শত আল্লাহর বান্দা শুধু জমজমের পান করেই দিনের পর দিন কাটিয়েছেন এবং ঈমানি শক্তিতে উজ্জীবিত হয়েছেন।
ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ) বলেন, আমি এমন মানুষও দেখেছি, যিনি অর্ধ মাস কিংবা তারও বেশি সময় শুধু জমজম পান করেই কাটিয়েছেন। কখনো ক্ষুধা অনুভব করেননি। অন্যান্যদের সাথে খুব স্বাভাবিকভাবেই তাওয়াফ করতেন। তিনি আমায় বলেছেন, একবার তো শুধু জমজম পান করেই চল্লিশ দিন কাটিয়েছেন। (জাদুল মাআদ: ৪/৩৯৩)
যেকোনো রোগ বা নেক নিয়তে জমজমের পানি
শুধু পিপাসা কিংবা ক্ষুধা নিবরণের জন্য নয়, বরং অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে বা যেকোনো নেক উদ্দেশ্যেও জমজমের পান পান করা যায় এবং এতে আল্লাহ তাআলা মাকছাদ ও উদ্দেশ্য পূরণ করে দেন। (নাওয়াদিরুল উসূল, পৃ. ৩৪১)
জমজম কূপ সৃষ্টির ইতিহাস
পিপাসার্ত শিশু ইসমাইলের (আল্লাহর নবী) পানীয় হিসেবে আল্লাহর ইচ্ছায় জমজম কূপের সৃষ্টি হয়েছিল। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘জমজমের পানি যে যেই নিয়তে পান করবে, তার সেই নিয়ত পূরণ হবে। যদি তুমি এই পানি রোগমুক্তির জন্য পান করো, তাহলে আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। যদি তুমি পিপাসা মেটানোর জন্য পান করো, তাহলে আল্লাহ তোমার পিপাসা দূর করবেন। যদি তুমি ক্ষুধা দূর করার উদ্দেশ্যে তা পান করো, তাহলে আল্লাহ তোমার ক্ষুধা দূর করে তৃপ্তি দান করবেন। এটি জিবরাইল (আ.)-এর পায়ের গোড়ালির আঘাতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পানীয় হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ: ২৪৩)
জাহেলি যুগে জুরহাম গোত্র খোজায়া গোত্র কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত ও বিতাড়িত হয়ে মক্কা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় এই কুয়ায় তারা মাটি ভরাট করে দেয়। এর প্রায় সাড়ে চার শ বছর পর স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হয়ে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আবদুল মুত্তালিব স্বীয় পুত্র হারেসকে সঙ্গে নিয়ে তা আবার খনন করেন।
জমজম কূপের অবস্থান
পবিত্র কাবা শরিফ থেকে ২০ মিটার বা ৬৬ ফুট, মতান্তরে ২১ মিটার পশ্চিমে মসজিদে হারামের ভেতরেই এ কূপের অবস্থান। প্রায় ১৮ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট চওড়া একটি আয়তক্ষেত্রের মতো কূপটি, যার গভীরতা ৩০ মিটার বা ৯৮ ফুট, মতান্তরে ১২০ বা ১৪০ ফুট। ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে, এই কূপের ছিল দুটি জলাধার। একটি হচ্ছে খাওয়ার জন্য, অন্যটি অজু করার জন্য। বর্তমানে বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে প্রতি সেকেন্ডে আট হাজার লিটার পানি উত্তোলন করা হয়।
সম্পর্কিত সংবাদ

অসুস্থতা অভাব অসহায়ত্ব একসাথে হলে এই দোয়াটি পড়ুন
দোয়া মুমিনের হাতিয়ার। দোয়া কবুলের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেন। বান্দার যাবতীয় দুঃখ-কষ্টবিস্তারিত…

হাজিদের সবরকম সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের সৌদি আরবে স্বাগত জানিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।বিস্তারিত…