আজ মহান মে দিবস

আজ বৃহস্পতিবার, ১ মে, বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস, যা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস নামেও পরিচিত। এবারের প্রতিপাদ্য— ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’। ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেট চত্বরে শ্রমিকদের আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে সংঘটিত আন্দোলনের স্মরণে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ওই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বহু শ্রমিক, যাদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে আজ বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশে এবারের মে দিবস উপলক্ষে মূল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশের বিভিন্ন স্থানে দিবসটি ঘিরে আয়োজন করা হয়েছে সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও আলোচনাসভা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং শ্রমিক সংগঠন শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

তবে, একদিকে মে দিবসের তাৎপর্য আরেকদিকে শ্রমজীবী মানুষের বাস্তব চিত্র— দুইয়ের মধ্যে এক ধরনের অসামঞ্জস্য স্পষ্ট। দেড় শতাব্দীর সংগ্রামের পরও বিশ্বের নানা প্রান্তে শ্রমিকেরা এখনও অধিকারবঞ্চিত। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মূল্যস্ফীতির ফলে শ্রমজীবীরা চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন। এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৭৪% নিম্নআয়ের পরিবার ধার করে চলছে, যাদের অধিকাংশই শ্রমজীবী।

বিশেষত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে (যেখানে বাংলাদেশের প্রায় ৮৫% শ্রমিক নিযুক্ত), শ্রমিকদের কাজ অনিশ্চিত, আয় সীমিত এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা অসংগঠিত। বেতন কাঠামো, সামাজিক নিরাপত্তা কিংবা শ্রম আইনের সুরক্ষা থেকে তারা প্রায় পুরোপুরি বঞ্চিত। এমনকি গার্মেন্টস, চা বাগান, কোয়ারি বা শিপইয়ার্ডে কাজ করা শ্রমিকরাও ‘কৃতদাস’ বললেও কম বলা হয়। বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের অবস্থাও ভালো নয়। মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ার মতো বাজারে তারা ন্যূনতম অধিকার বা নিরাপত্তা ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার অর্থনীতি ও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনলেও বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান খাতে এখনও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। কলকারখানা বন্ধ হয়ে হাজারো শ্রমিক চাকরি হারাচ্ছেন। আর প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে বিশ্বব্যাপী অটোমেশন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শ্রমিকের জায়গা দখল করছে, যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্রমিকদের বেঁচে থাকার জন্য শুধু বেতন বৃদ্ধি নয়, সামগ্রিক জীবিকা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য সরকারি রেশনিং, স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসন সুবিধা থাকা উচিত। সেই সঙ্গে, শ্রমিক-মালিক-সরকার—এই ত্রিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে একটি জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কাঠামো তৈরি করতে হবে। নয়তো মে দিবস কেবলই স্মরণ আর আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

এই মে দিবসে শ্রমজীবী মানুষের প্রতি সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় হোক আমাদের মূল অঙ্গীকার।

উল্লেখ্য, দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবিতে ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেট চত্বরে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। এতে অর্ধশত শ্রমিক হতাহত হন। এ হত্যার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এর তিন বছর পর ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা দিনটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

নিউজটি ফেসবুকে শেয়ার করুন ...
fb-share-icon





সম্পর্কিত সংবাদ

  • বিবাহের মাধ্যমে মানুষ পাপাচার থেকে বাঁচতে পারে : ধর্ম উপদেষ্টা
  • চারদিনের সফরে কাতার গেলেন প্রধান উপদেষ্টা
  • প্রধান উপদেষ্টা কাতার যাচ্ছেন আজ, গুরুত্ব পেতে পারে যেসব বিষয়
  • ফ্যাসিবাদী মুখাকৃতি সামনে রেখে শেষ হলো ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’
  • ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি থেকে এলো যে ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা
  • ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু ভূমিকম্প
  • ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে নববর্ষের শোভাযাত্রা হবে
  • Copy link
    URL has been copied successfully!