মিয়ানমারে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা জান্তার

স্মরণকালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধি ও বেঁচে যাওয়া লোকজনের বাঁচার মরিয়া চেষ্টার মাঝে মিয়ানমারে সাময়িক যুদ্ধিবিরতির ঘোষণা দিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার। ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত দেশটিতে ত্রাণ সহায়তা ও উদ্ধার প্রচেষ্টা জোরদার করার লক্ষ্যে এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে জান্তা। বুধবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে দেশজুড়ে বিদ্রোহীদের সঙ্গে জান্তার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার তথ্য জানানো হয়েছে।

এএফপি বলেছে, গত শুক্রবারের ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প মিয়ানমারজুড়ে হাজার হাজার ভবন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। এই ভূমিকম্পে প্রায় ৩ হাজার মানুষ নিহত ও হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।

দেশটির সামরিক সরকার বলেছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত সব এলাকায় ত্রাণ প্রচেষ্টা সহজতর করার লক্ষ্যে বুধবার থেকে আগামী ২২ এপ্রিল পর্যন্ত দেশজুড়ে যুদ্ধবিরতি পালন করা হবে। মিয়ানমারে চার বছর ধরে চলা রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধে লড়াইরত অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একই ধরনের প্রতিশ্রুতির পর জান্তা ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এক বিবৃতিতে দেশটির সামরিক জান্তা বলেছে, ত্রাণ সরবরাহ ও অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ প্রচেষ্টার গতি দ্রুত করা এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তবে গণতন্ত্রপন্থী ও জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সতর্ক করে জান্তা বলেছে, যুদ্ধবিরতি চলাকালীন হামলা, নাশকতা কিংবা লোকজনকে সংগঠিত করা অথবা সমাবেশ ডাকা এবং শান্তি বিঘ্নিত করার মতো কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হলে জান্তা বাহিনী তার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

এর আগে, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী ও বিভিন্ন দেশের সরকার মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে জড়িত সকল পক্ষকে লড়াই বন্ধ ও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার দিকে মনোনিবেশের আহ্বান জানায়।

দেশটির জান্তা বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জোট বিমসটেকের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক সফরে যাবেন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং। সম্মেলনে জোটের নেতাদের সঙ্গে মিয়ানমারের ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন তিনি।

বুধবার মিয়ানমারের জান্তা বলেছে, ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত অন্তত ২ হাজার ৮৮৬ জন নিহত ও ৪ হাজার ৬০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এছাড়া ধসে যাওয়া ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচে নিখোঁজ রয়েছেন ৩৭৩ জন।

দেশটিতে ভূমিকম্পে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার তৎপরতা এবং ত্রাণ সরবরাহ কাচ কঠিন হয়ে পড়েছে। ভূমিকম্পে পুরো ক্ষয়ক্ষতির চিত্র এখনও পরিষ্কার নয়। হতাহতের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শুক্রবারের ভূমিকম্পের আগেই দেশটির প্রায় ৩৫ মানুষ এই গৃহযুদ্ধের বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এই বাস্তুচ্যুতদের অনেকে বর্তমানে ক্ষুধার চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাতের দিকে দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী জাতিগত সংখ্যালঘু অন্তত তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর একটি জোট ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা প্রচেষ্টায় সমর্থন জানিয়ে এক মাসের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়।

থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামের জোটটির এই ঘোষণার আগে দেশটির আরেক গোষ্ঠী পিপলস ডিফেন্স ফোর্স পৃথক আংশিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়; যারা জান্তার শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পরপরই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল।
সূত্র: এএফপি।

নিউজটি ফেসবুকে শেয়ার করুন ...
fb-share-icon





সম্পর্কিত সংবাদ

  • ইসরায়েলে ফের দাবানল, নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা
  • ভারত সীমান্তে অবস্থান শক্ত করছে পাকিস্তানি সেনারা
  • এবার ইউরোপের দেশেও কোকাকোলা বর্জনের ডাক
  • গ্রিনকার্ডধারীদের জন্য নতুন সতর্কতা যুক্তরাষ্ট্রের
  • পাকিস্তানের সব বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা
  • ইউক্রেনে তিন দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা পুতিনের
  • ইরানে বন্দরে বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ৪০
  • থাইল্যান্ডে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৬
  • Copy link
    URL has been copied successfully!