মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা এটিই প্রথম মামলা, যার রায় হলো আজ।

দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ছয় অধ্যায়ে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলের অপর সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ।

২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত রায় পড়া শেষে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।

এ মামলায় পলাতক রয়েছেন শেখ হাসিনা ও কামাল। তবে গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় বছরখানেক ধরে কারাগারে রয়েছেন সাবেক আইজিপি মামুন। যদিও রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি। ফলে সাবেক এই আইজিপির শাস্তির বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দেন প্রসিকিউশন। একইসঙ্গে শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা চাওয়া হয়।

তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮৪ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

সোমবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটের পর কড়া নিরাপত্তায় কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে মামুনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। অনেকটা মাথা নিচু করেই ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় ঢোকেন তিনি।

এদিকে, শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বাড়ানো হয় কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। পুলিশ-র‌্যাব, এপিবিএন-বিজিবির পাশাপাশি নিয়োজিত রয়েছে সেনাবাহিনী। তৎপর গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও। নিরাপত্তার স্বার্থে রোববার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকেই দোয়েল চত্বর হয়ে শিক্ষাভবনমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সীমিত করা হয় জনসাধারণের চলাচলও।

গত ১৩ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন নির্ধারণ করেন। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন— বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

শেখ হাসিনার এ মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য-জেরা শেষ হয়। আর ৯ কার্যদিনে চলে প্রসিকিউশন-স্টেট ডিফেন্সের যুক্তিতর্ক পাল্টা যুক্তিখণ্ডন। ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রের প্রধান আইনকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সমাপনী বক্তব্য এবং চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের যুক্তিখণ্ডন শেষে রায়ের তারিখ নির্ধারণে সময় দেওয়া হয়।

নিউজটি ফেসবুকে শেয়ার করুন ...
fb-share-icon





সম্পর্কিত সংবাদ

  • আ’লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না : প্রধান উপদেষ্টা
  • মানবতাবিরোধী অপরাধ : শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণা ১৭ নভেম্বর
  • গণভোট আলাদাভাবে করলে অর্থের অপচয় হবে: তারেক রহমান
  • আ’লীগ ঠেকাতে মাঠে থাকবে জামায়াত, চরমোনাইসহ ৮ দল
  • বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া ২৬ সালে নির্বাচন হবে না: জামায়াত আমির
  • ধানের শীষ এখন পেটের বিষ : কাদের সিদ্দিকী
  • Copy link
    URL has been copied successfully!