ঈমান হারানোর মহামারি নিয়ে যা বলেছেন নবীজি
ঈমান মুসলমানের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ঈমান না থাকলে নেক আমল মূল্যহীন। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘সময়ের কসম! নিশ্চয়ই সব মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। শুধু তারা ব্যতিত; যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে।’ (সুরা আসর: ১-২)
শেষ জামানার একটি নিদর্শন হলো—রিদ্দা বা দীন থেকে বের হয়ে যাওয়া মহামারি আকার ধারণ করবে। হাদিস অনুযায়ী, মানুষ জানতেও পারবে না যে, সে আর মুসলিম নেই। অথচ সে নিজেকে মুসলিম দাবি করবে। আমাদের চারপাশেই এরা ঘুরবে, ফিরবে। একই টেবিলে বসে খাবে। আমাদের মেয়ে বোনদের সঙ্গে তাদের বিয়ে হবে। অথচ তারা মুসলিম নয়।
হজরত আবু মুসা আশয়ারি (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের পরবর্তী যুগে ফেতনা হবে গভীর অন্ধকার রাতের মতো। সে সময় মানুষ সকালে মুমিন থাকবে, সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে। সন্ধ্যায় মুমিন থাকবে, সকালে কাফের হয়ে যাবে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১৩/৩৮৫; জুহদ লি ইমাম আহমদ: ১৯৯)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা অন্ধকার রাতের টুকরোগুলোর মতো (যা একটার পর একটা আসতে থাকে) ফেতনা আসার আগে নেকির কাজ দ্রুত করে ফেলো। মানুষ সে সময় সকালে মুমিন থাকবে এবং সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে অথবা সন্ধ্যায় মুমিন থাকবে, সকালে কাফের হয়ে যাবে। নিজের দ্বীনকে দুনিয়ার সম্পদের বিনিময়ে বিক্রি করবে।’ (মুসলিম: ১১৮; তিরমিজি: ২১৯৫, আহমদ: ৭৯৭০, ৮৬৩১, ৮৮২৯)
অর্থাৎ কেয়ামতের আগে মানুষ এতটাই দুনিয়ামুখী হবে যে, তারা দুনিয়ার বিনিময়ে দ্বীন বিক্রি করে দেবে। দুনিয়া হাসিলের স্বার্থে কুফরি করবে বা কুফরি কথা বলে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। অর্থের বিনিময়ে ইসলামের বিরোধিতা করবে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে গালাগালি করবে। পার্থিব স্বার্থে কাফেরদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে সাহায্য করবে। টাকা-পয়সার লোভে মদ, জিনা, সুদ, ঘুষ ইত্যাদি হারাম জিনিসকে হালাল বলে ফতোয়া দেবে। এভাবে আর্থিক লোভ-লালসার শিকার হয়ে একশ্রেণির মানুষ দীনকে বিক্রয় করতে কুণ্ঠাবোধ করবে না।
এই ফিতনায় যেন পড়তে না হয় সেজন্য আল্লাহর কাছে এই দোয়া করা উচিত—‘ইয়া মুকাল্লিবাল ক্বুলুব সাব্বিত ক্বালবি আলা দীনিক’ অর্থ: হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী, আমার অন্তরকে তোমার দীনের উপর অটল রাখো।’ (তিরমিজি: ৩৫২২)
আরেকটি দোয়া করা যায়— ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল ফিতানি, মা জহারা মিনহা ওয়া মা বাতানা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমরা আপনার কাছে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল ফিতনা থেকে পরিত্রাণ চাই।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৭৭৮)
আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর আনিত বিধানকে অপছন্দ করা, দ্বীনের কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা, জাদু করা, মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফের-মুশরিকদের সমর্থন ও সহযোগিতা করা ইত্যাদি কারণে মানুষের ঈমান ধ্বংস হয়ে যায়। (দেখুন- সুরা নিসা: ৪৮, ৬৫; সুরা সাজদাহ: ২২; সুরা তওবা: ৬৫-৬৬; সুরা বাকারা: ১০২; সুরা তাওবা: ২৩; সুরা নিসা: ১৪; সুরা নিসা: ৬০; সুরা মায়েদা: ৫১)
আমরা এখন হয়ত সেই যুগেই পদার্পণ করছি। উল্লেখিত ফিতনায় পড়ে দ্বীন থেকে অনর্গল বের হয়ে যাচ্ছে মানুষ। যার কারণে বিশ্বব্যাপী নেমে এসেছে বিপর্যয়। এই বিপর্যয় থেকে বাঁচতে আমাদের আবারও ফিরে যেতে হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (স.)-এর দেখানো পথে।
হাদিসে এসেছে, নবীজি (স.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কাছে দুই বস্তু রেখে যাচ্ছি। তোমরা যতক্ষণ তা ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নত।’ (মুয়াত্তা মালিক: ১৬০৪)
এখন আর অন্যের দোষ তালাশ করারও সময় নেই। এখন উচিত নিজেকে সংশোধন করা। গুনাহ থেকে বিরত থাকা। সর্বদা আল্লাহর দরবারে তাওবা-ইসতেগফার করা। সকল ফেতনা থেকে বেঁচে থাকতে মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা।
হজরত হুজাইফা ইবনে ইয়ামান (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমরা মুসলিমদের জামাত ও ইমামের সঙ্গে আকঁড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তাদের কোনো জামাত বা ইমাম না থাকে? তিনি বলেন, ‘তাহলে সে সব বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে তুমি আলাদা থাকবে, যদিও তুমি একটি বৃক্ষমূল দাঁত দিয়ে আঁকড়ে থাকো এবং এ অবস্থায়ই মৃত্যু তোমার নাগাল পায়।’ (মুসলিম: ৪৬৭৮)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই ফেতনার জামানায় মুরতাদের মিছিলে শামিল হওয়া থেকে হেফাজত করুন। ঈমান নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সম্পর্কিত সংবাদ
রিজিকের জন্য কোরআনের দোয়া: হজরত ঈসা (আ.)-এর আমল
রিজিকের একমাত্র মালিক আল্লাহ তাআলা। এ বিশ্বাস প্রতিটি মুমিনের অন্তরে গভীরভাবে গেঁথে থাকে। পবিত্র কোরআনেবিস্তারিত…
পরিশুদ্ধ জীবন গড়ার ৫ সহজ আমল
আত্মশুদ্ধি ও পরিশুদ্ধ জীবনই হলো ইহকালীন ও পরকালীন সফলতার মূল চাবিকাঠি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,বিস্তারিত…
