কাজের লোককে দিনে কতবার ক্ষমা করতে বলেছেন নবীজি
কাজের লোক আমাদের জীবনের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ কাজের লোক রাখতেই হয় নিজের অক্ষমতার কারণে। অর্থাৎ যে কাজ নিজে করার শক্তি বা সময়-সুযোগ নেই, সেই কাজটি করে দেয়ার জন্যই কাজের লোক রাখতে হয়। আর তারা কিছু উপার্জনের জন্য আরাম-আয়েশ কোরবানি দিয়ে কাজটি করে দেন।
ইসলামি আদর্শমতে, কাজের লোককে শুধু টাকার গোলাম মনে করা যাবে না। তারা সদ্ব্যবহার পাওয়ারও হকদার। প্রয়োজনে তাদেরকে সহযোগিতাও করতে বলেছেন নবীজি। কাজের লোক দূরে থাক, টাকায় কেনা গোলাম-বাদির ব্যাপারে রাসুল (স.) কী বলেছেন শুনুন- ‘…আল্লাাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করেছেন। তোমাদের কারো অধীনে যদি কেউ থাকে তাহলে সে যেন নিজে যা খায় তাকেও তা থেকে খাওয়ায়। নিজে যা পরিধান করে তাকেও তা থেকে পরিধান করায়। এবং তোমরা তাদের উপর সাধ্যের বেশি কাজ চাপিয়ে দিও না। যদি দাও তাহলে নিজেও সে কাজে তাকে সাহযোগিতা করো।’ (সহিহ বুখারি: ২৫৪৫)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যখন খাদেম খাবার প্রস্তুত করে তোমার সামনে পেশ করে,তখন (পারলে তাকে তোমার সাথে বসিয়ে খাওয়াও) তাকে যদি তোমার সাথে বসিয়ে খাওয়াতে না পার অন্তত তার হাতে এক দুই লোকমা তুলে দাও। কারণ এ খাবার প্রস্তুত করতে গিয়ে (আগুনের তাপ ও) সকল কষ্ট তো সেই সহ্য করেছে। (সহিহ বুখারি: ২৫৫৭; সহিহ মুসলিম: ১৬৬৩)
অনেকে কাজের লোকের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করে, সবসময় চাপের ওপর রাখে। যা মুমিনের জন্য মোটেও শোভনীয় নয়। তারাও আমাদের মতোই মানুষ। আমরা সবাই আল্লাহর বান্দা। কেউ কেউ তো কাজের লোকের একটু ভুল হলেই সেটাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে মজুরি কর্তন করে নেয়। অথচ তা নবীজির শিক্ষার বিপরীত। বরং তাদেরকে ক্ষমা করতে হবে। একবার এক সাহাবি এসে নবীজিকে জিজ্ঞেস করলেন,আল্লাহর রাসুল! আমি খাদেমকে (কাজের লোক বা গোলামকে) কতবার ক্ষমা করব? নবীজি চুপ থাকলেন। সাহাবি আবার জিজ্ঞেস করলেন। এবার নবীজি বললেন, প্রতিদিন সত্তরবার। (জামে তিরমিজি: ১৯৪৯)
ভুল তো মানুষেরই হয়। একজন কাজের লোকেরও ভুল হবেই। সেক্ষেত্রে তাদের সাথে কেমন আচরণ হবে উপরের হাদিস থেকে তা আমরা জানতে পারলাম। সত্তরবার পর্যন্ত ক্ষমা করতে হবে। এখানে সত্তর মানে সত্তর সংখ্যা উদ্দেশ্য নয় বরং উদ্দেশ্য হলো- যতবার ক্ষমা করার প্রয়োজন দেখা দিবে ততবার ক্ষমা করবে। এমন কোনো কথা বলা উচিত নয়, যার দ্বারা সে মনে কষ্ট পায়। এমন কোনো আচরণ করা উচিত নয়, যার কারণে সে হীনম্মন্যতায় ভোগে।
সন্তানদেরও শেখানো দরকার কাজের মানুষের সাথে কেমন আচরণ করতে হয়। অনেক সময় আমাদের অসতর্কতায় তারা কাজের মানুষের সাথে অন্যায় আচরণ করা শেখে। আমরা যদি বিষয়টি শুধরে না দিই তাহলে আমাদের সন্তানেরা এখান থেকে জুলুম করা শিখবে, যার দায়ভার আমাদের ওপরই বর্তাবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইসলামি নির্দেশনা, শিষ্টচার শেখার ও মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সম্পর্কিত সংবাদ
রিজিকের জন্য কোরআনের দোয়া: হজরত ঈসা (আ.)-এর আমল
রিজিকের একমাত্র মালিক আল্লাহ তাআলা। এ বিশ্বাস প্রতিটি মুমিনের অন্তরে গভীরভাবে গেঁথে থাকে। পবিত্র কোরআনেবিস্তারিত…
পরিশুদ্ধ জীবন গড়ার ৫ সহজ আমল
আত্মশুদ্ধি ও পরিশুদ্ধ জীবনই হলো ইহকালীন ও পরকালীন সফলতার মূল চাবিকাঠি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,বিস্তারিত…
