সাতক্ষীরায় পানিবন্দি অর্ধলক্ষাধিক মানুষ, তলিয়ে গেছে ঘের-ক্ষেত ও বসতবাড়ি

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ::
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরাসহ কৈখালী ইউনিয়ন সম্পূর্ণভাবে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ভাঙন কবলিত বুড়িগোয়ালীনি, পদ্মপুকুর, মুন্সিগঞ্জ, কাশিমাড়ী ও রমজাননগর ইউনিয়নের আরও অর্ধশতাধিক গ্রামে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে।

এদিকে, আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রিউলা ও আশাশুনি সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে। দুর্গত এলাকার পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হওয়া ছাড়াও লক্ষাধিক একর জমির চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকশত মিষ্টি পানির পুকুর জোয়ারের লবনাক্ত পানিতে তলিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। উপদ্রুত এলাকায় খাবারসহ পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে।

বুধবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব শুরু হয়। প্রবলবেগে ঝড় না হলেও নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে লোকালয়ের দিকে নদীর পানি ধেয়ে আসতে থাকে। দুপুরের আগেই উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার ৭০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়।

এদিকে দুপুরের পড়ে ভাটা শুরু হলেও সেভাবে নদীর পানি না কমায় রাতের জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আগে থেকে সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে আশ্রয় না নেওয়া পানিবন্দি মানুষজন উদ্ধারকর্মীদের সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণসহ করণীয় নির্ধারণের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি দুপুরের পরপরই জরুরি সভা আহ্বান করে।

বুধবার সকাল থেকে নদ-নদীসমূহে পানি বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে অতিজোয়ারের চাপে সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে শ্যামনগরকে ঘিরে থাকা ৫, ১৫ ও ৭ নং পোল্ডারের বিভিন্ন অংশে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার নাপিতকালী, জেলেখালী, গাগড়ামারী, চাঁদনীমুখা এলাকার বাঁধ ছাপিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এ সময় প্রায় চার শতাধিক গ্রামবাসী একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধের ওপর আইল দিয়ে পানির প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু প্রবল জোয়ারের তোড়ে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। মুহূর্তের মধ্যে সুন্দরবনের কোলঘেষা দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার ১৫টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। সীমান্তবর্তী কালিন্দি নদীসংলগ্ন নীদয়া অংশের বাঁধ ভেঙে ও পার্শ্ববর্তী একাধিক এলাকার বাঁধ উপচে মাদার নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করলে দুপুরের মধ্যে ইউনিয়নের ২২টি গ্রামের সবগুলোকে প্লাবিত হয়।

শ্যামনগর উপেজলা নির্বাহী অফিসার আ ন ম আবুজর গিফারী জানান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনসহ পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে ইতিমধ্যে সভা করা হয়েছে। শ্যামনগরের বিস্তিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ঝড়ের তেমন তীব্রতা ছিল না। কিন্তু নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মানুষজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের উদ্ধারের ব্যাপারে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, ঝড়ে তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চিংড়ি শিল্পের। শত শত মাছের ঘের, ফসলিজমি তলিয়ে গেছে। শ্যামনগরের ১৫টি স্থান দিয়ে পানি প্রবেশের খবর পেয়েছি। কী পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানতে হলে আরও সময় লাগবে। পূর্ণিমার ভরাকাটলা চলায় রাতের জোয়ার আরও বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, দুর্গত এলাকার মানুষ যাতে ঠিকমতো খাবার পায় সেজন্য ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৬৩ মেট্রিকটন খাদ্যসামগ্রী আমাদের হাতে রয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকায় যাতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয় সে ব্যাপারে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।






Related News

  • বগুড়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই কিশোর নিহত
  • পাঁচ দফা দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিড়ি শ্রমিকদের মানববন্ধন
  • ঠাকুরগাঁওয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার
  • হাতিরপুলে বহুতল ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট
  • সাতক্ষীরায় দুটি ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ
  • বেনাপোলে কিশোরী ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ২
  • রাজধানীরবাড্ডায় ফার্নিচারের দোকানে ভয়াবহ আগুন
  • রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩
  • %d bloggers like this: