করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ ধাপেই বাংলাদেশ

সংক্রমণ প্রতিরোধে শ্রীলঙ্কান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থানের প্রেক্ষাপটে বাতিল হয়ে যায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের শ্রীলঙ্কা সফর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুসারে শ্রীলঙ্কায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে তিন হাজার ৩৮৮ জন, মারা গেছে ১৩ জন। প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে মাত্র পাঁচ-ছয়জন করে। অনেক দিন ধরে মৃত্যুর ঘরটিও শূন্য। এই তথ্য বিবেচনায় নিয়ে শ্রীলঙ্কা সরকারের এমন কঠোর অবস্থানের সাফল্যকেই ইঙ্গিত করছেন বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরাও। কিন্তু বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণ কোন পথে—এ নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা, সংশয় ও বিভ্রান্তি।

এমন পরিস্থিতিকে আরো জোরালো করে তুলছে টানা ১৫০ দিনের দৈনিক সংক্রমণ হার ১০ শতাংশের নিচে না নামা এবং চার মাসেও দৈনিক মৃত্যুসংখ্যা ২০ জনের নিচে না নামার বিষয়টি। তাও গত শুক্রবার হঠাৎ করে ১২৭ দিনের মাথায় সর্বনিম্ন ২০ জনে নেমেছে মৃত্যু। গত ২৮ মে মৃত্যু ছিল ১৫ জন। এরপর প্রতিদিনই মৃত্যু ২০ জনের ওপরে থাকছে। গতকালও মৃত্যু ছিল ২৩ জনের। আবার অনেক দিন ধরেই মোট সংক্রমণ হার আটকে আছে ১৮-১৯ শতাংশের মধ্যে; এটাও কমছে না। তবে বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়েই বলছেন, আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে দৈনিক শনাক্ত হার ৫ শতাংশের নিচে বা সংক্রমণের প্রথম ঢেউ শেষ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, বরং এই সময়ের মধ্যে উল্টো আরো বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈজ্ঞানিক নির্দেশনা অনুসারে সংক্রমণের চারটি স্তরের মধ্যে বাংলাদেশ এখনো সংক্রমণের সর্বোচ্চ স্তর হিসেবে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সর্বস্তরের সংক্রমণে রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতির সূচক হিসেবে এরপর নামতে হবে গুচ্ছ সংক্রমণ বা ক্লাস্টার ট্রান্সমিশনে, তার পর নামতে হবে বিচ্ছিন্ন সংক্রমণ বা স্পোরেডিক ট্রান্সমিশনে; তার পর আসবে সংক্রমণহীন বা শূন্য অবস্থায়। ফলে আমরা এখনো নিরাপদ পর্যায়ে আসছি তা বলার মতো পরিস্থিতি হয়নি।’

যদিও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল ঢাকা শিশু হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে বলেন, করোনায় বাংলাদেশ এখন অনেকটাই নিরাপদ অবস্থায় আছে। তিনি অবশ্য এ ক্ষেত্রে ভারত, ইউরোপ-আমেরিকার উদাহরণ টেনে বলেছেন, ওই সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু অনেক কম আছে।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনো কমিউনিটি ট্রান্সমিশন পর্যায়ে রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন থেকে ক্লাস্টার ট্রান্সমিশনে নেমে তার পর প্রথম ঢেউ কমে যাওয়ার প্রশ্ন আসে। ফলে আমরা এখনই প্রথম ঢেউ কাটিয়ে ওঠার অবস্থায় আছি বলে মনে হচ্ছে না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, যারা বাইরে থেকে প্রতিদিন দেশে ঢুকছে তাদের ক্ষেত্রে আরো কড়াকড়ি থাকা উচিত। কারণ এখনো তাদের মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েই গেছে।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘আগস্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শনাক্ত হার ক্রমান্বয়ে কমে আসছিল, যা দেখে আমরা অনেকটা আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু সেপ্টেম্বরে মাসজুড়ে আবার প্রায় একই জায়গায় দাঁড়িয়েছে সংক্রমণ। অর্থাৎ দৈনিক আর দশের নিচে নামছে না, বরং এক দিন দশের ঘরে গিয়ে আবার ওপরে উঠেছে।’

ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, এখন প্রতিদিন যে শনাক্ত হচ্ছে তার মধ্যে একটি অংশ থাকে বিদেশগামী। তারা নেগেটিভ হয়েই বিদেশে যাচ্ছে। ফলে ওই হিসাব আলাদা করে রাখলে দৈনিক শনাক্ত হার এখন যা আছে তার চেয়ে কিছুটা বেশি হওয়ার কথা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে দেখা যায়, এখনো প্রতিদিন আকাশ, জল ও স্থলপথে সাড়ে তিন হাজার মানুষ দেশে ঢুকছে। কিন্তু তাদের স্ক্রিনিং হলেও যথাযথভাবে কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশন হচ্ছে না, বরং চলছে ঢিলেঢালা ভাব। শ্রীলঙ্কার মতো কঠোর অবস্থানে থাকতে পারছে না সরকার বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অথচ শ্রীলঙ্কার চেয়ে প্রায় ১০০ গুণের বেশি সংক্রমণ ও ৪০০ গুণের বেশি মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে।






Related News

  • ডেঙ্গুতে আরও ৪ মৃত্যু, হাসপাতালে ১৫০৩
  • ডেঙ্গুতে ১৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি রেকর্ড ২৬৫৩ জন
  • ডেঙ্গুতে আরও ১৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ২৪১৮
  • ৪৪ জেলায় কৃমিনাশক খাওয়ানো হবে ২২ জানুয়ারি থেকে
  • করোনায় আরও ১৪১৯ মৃত্যু, শনাক্ত পৌনে ৪ লাখ
  • অক্টোবরের ১২ দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রায় সাড়ে ৬ হাজার
  • করোনা টিকার প্রথম ডোজ ক্যাম্পেইনের সময় বাড়ল
  • ভাজা-পোড়া খাবার কতটা ক্ষতিকর ?
  • %d bloggers like this: